দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দার উন্মোচিত হলো। প্রথমবারের মতো এ প্রজন্ম ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার সুনিশ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখতে পেয়েছে।
এই প্রাপ্তি দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল, তবে শেষ মুহূর্তে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যে ছাত্র-জনতা জীবনের মায়া পরিত্যাগ করে সামনে এগিয়ে এসেছে, তাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করবে।
এই পরিবর্তনের সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে একটা সর্বব্যাপী রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে, যাদের অবস্থান এ গণঅভ্যুত্থানে জোরালো ছিল না তাদের মধ্যে থেকে এখন বৈষম্য নিরসনের দাবি বেশ জোড়ালো ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে সকল মহলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এসব দাবি এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে কতখানি বিবেচনা করা সম্ভব তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের ভোটাধিকারকে নানাভাবে ব্যাহত করেছে। এই জাতি কখনও গণতান্ত্রিক চর্চা বিকাশ লাভ করার নিরবিচ্ছিন্ন সুযোগ লাভ করতে সক্ষম হয়নি।
অনেকেই হয়তো শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবকে দায়ী করে থাকবেন। কিন্তু একই সাথে জাতি হিসেবে সকল মহলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় একটি সুষ্ঠু ও সুসংহত রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করানোর ব্যর্থতা এর একটি বিশেষ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এটি অনস্বীকার্য যে, ইতঃপূর্বে একটি সুষ্ঠ ও সুসংহত রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা এ জাতি এতটি গভীর ভাবে অনুভব করেনি।
বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহারের ব্যাপকতা এই আকাংখাকে তীব্র করেছে। প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকই এখন একটি সুষ্ঠু ও সুসংহত রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনের পক্ষে মতামত প্রকাশ করছেন। অনেকেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, যা এই সময়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে পরেই নানান মহল থেকে দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে। বৈষম্য শব্দটিকে সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রত্যেক পেশাজীবী মহল তাদের অবস্থানকে কোন না কোন বৈষম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সঙ্গত- অসঙ্গত সকল উপায়ে তারা তাদের দাবি উত্থাপন করে আসছেন।
কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সংকটে ফেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা চলছে। অনেকেই যেকোন বৈষম্য হিসেবে ট্যাগ দিচ্ছেন।
এখানে বলে রাখা ভালো যে সকল ভিন্নতাই বৈষম্য নয়। কাজের প্রকৃতি, গুরুত্ব, পরিস্থিতি, যোগ্যতা ও মেধা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠান সমূহ বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
এর পার্থক্য বিশ্বের সকল দেশে প্রচলিত। তাই সকল ধরনের পার্থক্যকে বৈষম্য হিসেবে বিবেচনা করে আন্দোলন দাবিদাবা উত্থাপন কখনো যৌক্তিক নয়।
আমরা সবাই একমত যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রের সকল বিষয় সংস্কার সম্ভব নয়। যৌক্তিক মেয়াদের কথা বিবেচনা করে, প্রাধিকার নির্ধারণপূর্বক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।
সরকারকে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে দক্ষ লোকদের পদায়ন করা আবশ্যক। এর মধ্যেই সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তবে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা সম্ভব হয় নি। একই সাথে অর্থনীতির পুনরূদ্ধার, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্টা করা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
একমাস সময়ের মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যাংকসমূহের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়া এবং নতুন পরিষদ গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
গত ১৫ বছরে আইন শৃংখলা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। সেই সাথে আন্দোলনে নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎিসার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া জরুরী।
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। একই সাথে ভবিষ্যৎ কী সমস্যার উদ্ভব হতে পারে তাও বিবেচনা করে অগ্রসর হওয়া আবশ্যক।
কতিপয় রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই এই বিষয়টি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এ দেশের সাধারণ জনগণ অনুভব করে।
মন্ত্রিপরিষদ সরকার কীভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম না করে ঐক্যের ভিত্তিতে জনকল্যাণমুখী সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তণ করতে পারে সে বিষয় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সেই সাথে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।
বর্তমানে স্থানীয় সরকার আইনে, যে সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে তা কতটুকু যৌক্তিক বিবেচনা করা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে মাঠ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ না করে উভয় পক্ষের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
বিগত সরকারের আমলে বিচার ব্যবস্থা অনেক বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। বিচারপতি নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদন করার প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আদালতকে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
বিচার ব্যবস্থাকে রাজনীতি প্রভাব মুক্ত করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগ পৃথককরণ করা হলে ও প্রকৃতপক্ষে বিচারবিভাগ অন্য যেকোনো সময় অপেক্ষা অধিক মাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাব বলের মধ্যে অবস্থান করেছে। জনমনে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন আবশ্যক।
সর্বোপরি মনে রাখা প্রয়োজন, জনগণের মূল দাবী রাজনৈতিক সংস্কার যার মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব এবং রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা গ্রহণ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।
এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ বিধি নির্ধারণ, নির্বাচন ব্যবস্থার
সংস্কার এর উপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। বিশেষত সংবিধান সংশোধন অথবা পুনঃলিখন যে অর্থে হউক না কেন আমাদের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন।
গনতান্ত্রিক মুল্যবোধকে সামনে রেখে বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে পারস্পারিক জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশে অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
অধিকন্তু স্বৈরাচার সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন আত্মঘাতের পদক্ষেপসমূহের সংস্কার করার পদক্ষেপ উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। সকল আত্নঘাতী চুক্তি ও নিপিড়নমূলক আইনসমূহের সংস্কার দরকার। এ গুলো নিঃসন্দেহে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
প্রশাসনিক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হলে এতে ব্যাপক ভ্রান্তির সুযোগ থাকে। তাই সুচিন্তিত ভাবে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ধাপে ধাপে কাজগুলো নিষ্পন্ন করা প্রয়োজন।
প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার কাজে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। কেননা দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে সর্বক্ষেত্রেই এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার বিষয়ে সুসংগঠিত শক্তিশালী চক্র কাজ করে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটানোর যেকোনো পদক্ষেপে এই মুহূর্তে আত্মঘাতী পদক্ষেপ হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
ভূ-রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ জাতির পক্ষে তার সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা সবসময় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বিশেষত আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর বর্তমান অবকাঠামোতে দূর্বলতা অন্য যে কোন সময়ের অপেক্ষা অনেক বেশি। স্বৈরাচারীর উত্থান ও বিকাশ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর দূর্বলতা অন্যতম। দীর্ঘ ১৫ বছরের এই দূর্বলতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা কঠিন। একমাত্র জাতীয় ঐক্যই পারে এ সমস্যা মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট তৈরি করতে।
এই মুহূর্তে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বার্থ ভুলে পরিশুদ্ধ চিত্তে সরকারকে সহযোগিতা করা ব্রত হওয়া উচিত। জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই করে নেওয়ার জন্য আত্মত্যাগ প্রয়োজন।
মনে রাখা প্রয়োজন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, আইনের শাসন পুনঃরোদ্ধার করা এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এমন একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যেখানে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার কোন সুযোগ সৃষ্টি না হয়।
লক্ষ্যনীয় যে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে সরকারের পতনের পর বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নিজেদের গোষ্ঠীগত সুবিধা আদায়ের বিষয়সমুহকে বৈষম্য হিসেবে ব্যাখা দিয়ে আন্দোলনে নামা হচ্ছে।
এসব গোষ্ঠীগত সুবিধা দেয়া হলে অন্যদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দেবে, যার ফলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবার সুযোগ রয়েছে। একই সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারি মূল উদ্দেশ্য সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করার মূল উদ্দেশ্য হতে দূর সরে যাবার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে। সরকারি চাকরিজীবীরা বেশিরভাগ মনে করেন তারা বঞ্চিত।
আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি, দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে বিশৃখলা আমাদের সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নানা পেশাজীবী মানুষ তাদের নিজস্ব দাবিদাবার বিষয়গুলোকে বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনে নামছেন। এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুবিধা প্রাপ্ত ক্যাডার সার্ভিসও রয়েছে।
বেশ কিছু পত্রিকায় ও সামাজিক মাধ্যমে ক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণে নানামুখী আলোচনা চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের বৈষম্য নিদর্শন শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদান করতে পারে।
কিন্তু এতে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ ছাত্র জনতা চাওয়া পাওয়ার কতখানি প্রতিফলন ঘটবে তা বিবেচনা করা দরকার। সরকারি কর্মচারীদের ভেতর প্রকৃতপক্ষে জনগণকে সেবা প্রদান করার মনোভাব তৈরি করা এ সরকারের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। তাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হওয়া আদৌ সঙ্গত কী না তা ভাবা আবশ্যক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের চাহিদা পূরণ এই স্বল্প সময়ে সম্ভব নয়। এটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা উচিত। একটি বিশেষ অবস্থার সুযোগ নিয়ে তড়িঘড়ি করে কোন গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে এতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ হয়েছে। অন্যদিকে সরকার তার মূল উদ্দেশ্য সাধনে আরও সময় কালক্ষেপণ হতে পারে এবং তা সামগ্রিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, এ সময় জাতীয় ঐক্য অতি প্রয়োজন। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা কিংবা দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোকে আরও জটিল আকার ধারণ করা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিপদজনক।
ভূ-রাজনৈতিক ভাবে আমরা যে অবস্থানে রয়েছি তা আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও অন্তবতীকালীন সরকারের আইনগত অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের সকলকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রাষ্ট্রের সংস্কার দাবি উত্থাপন করা উচিত।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে বৈষম্য শব্দটি যেন ট্যাগ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা প্রশংসনীয়। তবে রাজনীতি কিংবা প্রশাসনের যে কোনো পরিবর্তন সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।
আপাত দৃষ্টিতে অনেক কিছুই ন্যায় সঙ্গত এবং যৌক্তিক মনে হলেও এর প্রভাব ও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা সম্পূর্ণ হিতের বিপরীত হতে পারে। তাই যে কোন পরিবর্তন অত্যন্ত সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত হওয়া আবশ্যক।