বিশ্বে বর্তমানে মরণব্যধি মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। চিকিৎসা সম্ভব হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার প্রায় অর্ধেকের পিছনেই কোনও না কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর কাজ করে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলছে, তরুণ প্রজন্মসহ, তার আগের প্রজন্ম থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এবং তার ছায়া বর্তমান প্রজন্মের উপরেও এসে পড়েছে। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগের মধ্যেই স্তন, লিভার, মলাশয়, মলদ্বার, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়ের মতো প্রায় ১৭ প্রকার ক্যান্সারের অস্তিত্ব মিলেছে। তবে জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন যে মারণরোগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে গবেষণাপত্রে সে কথাও বলা হয়েছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে জীবনযাপনে ৭টি পরিবর্তন আনা যায়:
১) ওজন নিয়ন্ত্রণ
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ওজন বেশি বেড়ে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। সেই ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ব্যায়াম না করলে ওজন কমানো সম্ভব নয়। স্থূলতার কারণে বৃদ্ধি পায় স্তন, কোলন, পাকস্থলীর ক্যানসার।
২) উদ্ভিজ খাবার
প্রাণিজ খাবার বাদ দিয়ে বেশি করে শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বীজ, বাদাম, টোফু, দানাশস্য খেতে পারলেও মন্দ হয় না। ‘ইউসি স্ক্যান সানফ্রান্সিকো’র দেয়া তথ্য বলছে উদ্ভিদজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪৭ শতাংশ কমিয়ে ফেলতে পারে। পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ভয়াবহতা ক্ষীণ হয় উদ্ভিজ্জ খাবার খেলে।
৩) অলস জীবনযাপন
দিনে দিনে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হল অলস জীবনযাপন। টানা ১০ থেকে১২ ঘণ্টা বসে বা শুয়ে থাকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। সমীক্ষা বলছে, যারা কোনো রকম কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাদের শরীরে ক্যানসার হানা দেয়ার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ।
৪) প্রক্রিয়াজাত খাবার
ভাত-রুটির মতো ঘরোয়া খাবারের বদলে ভাজাভুজি, বাইরের মুখরোচক খাবার খাওয়া কিংবা নরম পানীয়ে চুমুক দেয়ার ঝোঁক বেড়েছে। তা ছাড়া সময় এবং শ্রম বাঁচাতে হিমায়িত বা প্রক্রিয়াজাত প্রাণিজ খাবার খাওয়ার প্রবণতাও দিনে দিনে বাড়ছে। এই ধরনের খাবারে কৃত্রিম চিনি এবং সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি। তাই এগুলো খেলে স্থূলত্বও বাড়তে থাকে। স্থূলত্বের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে।
৫) ফাইবারজাতীয় খাবার
যেসব খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি এবং ফাইবারের পরিমাণ কম, সেগুলো থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সেই ঝুঁকি এড়াতে প্রতি দিনের ডায়েটে ফল-মূল, বাদাম, বীজ, দানাশস্য জাতীয় খাবার রাখতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৬) রোদও বিপজ্জনক
সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বকের ক্যানসার হওয়ার নেপথ্যে এই অতিবেগুনি রশ্মির বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই রোদ থেকে বাঁচতে অবশ্যই ভাল মানের সানস্ক্রিন মাখতে হবে। সঙ্গে ছাতা, টুপি, রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে।
৭) ধূমপান এবং মদ্যপান
যারা ধূমপান কিংবা মদ্যপানে আসক্ত তাদের গলা, মুখগহ্বর, খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সেই ঝুঁকি এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে ফেলতে চাইলে জীবন থেকে ধূমপান এবং মদ্যপান বাদ দিতে হবে।