কিশোরগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের বিরুদ্ধে জেলার সংস্কৃতি কর্মীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকারের শক্তিবলে নানাভাবে শিল্পকলাকে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিলেন, যার কারণে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শিল্পকলা বিমুখ ছিল।
গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হাজির হয় সংস্কৃতিকর্মীরা। শিল্পকলার সামনে বিক্ষোভের মাধ্যমে তিনটি দাবি জানায় তারা। তাদের প্রথম দাবি কালচারাল অফিসারের পদত্যাগ। আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কার্যালয়ে হাজির হোননি কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। পরে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংস্কৃতি কর্মীরা।
সংস্কৃতি কর্মীদের অভিযোগ, সরকারি নানা আয়োজনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত বাতিল করা হতো সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর হল বরাদ্দ। এছাড়াও শিল্পীরা শিল্পকলার বারান্দায় রিহার্সেল করতে গেলে ৫০০ টাকা ও বসে থেকে সাংগঠনিক আড্ডা দিলেও ১৫০০ টাকা ভাড়া দাবি করা হতো। কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাকে অপমান ও ভয়ভীতি দেখানো হতো।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার প্রধান হাসিনা দেশছেড়ে পালানোর পর থেকেই সংস্কৃতি কর্মীদের অনেকে মুখ খুলতে শুরু করে তার বিরুদ্ধে।
জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ শিল্পীদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। সেই সাথে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি কালচারাল অফিসারকে ঘটনার সঠিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তের আগে অফিস থেকে নানা ফাইলপত্র সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিল্পীরা। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিস থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে কালচারাল অফিসার ও তার অফিস সহকারীর কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেন।
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?gdpr=0&gdpr_consent=tcunavailable&tcfe=3&client=ca-pub-2244605381065278&output=html&h=280&slotname=4375987801&adk=3787891214&adf=19719313&pi=t.ma~as.4375987801&w=590&abgtt=6&fwrn=4&fwrnh=100&lmt=1726483345&rafmt=1&format=590×280&url=https%3A%2F%2Fwww.channelionline.com%2Fcalling-cultural-terrorist-the-cultural-officer-demands-trial%2F&fwr=0&rpe=1&resp_fmts=3&wgl=1&uach=WyJXaW5kb3dzIiwiMTAuMC4wIiwieDg2IiwiIiwiMTI4LjAuNjYxMy4xMzgiLG51bGwsMCxudWxsLCI2NCIsW1siQ2hyb21pdW0iLCIxMjguMC42NjEzLjEzOCJdLFsiTm90O0E9QnJhbmQiLCIyNC4wLjAuMCJdLFsiR29vZ2xlIENocm9tZSIsIjEyOC4wLjY2MTMuMTM4Il1dLDBd&dt=1726483285275&bpp=4&bdt=3231&idt=1925&shv=r20240911&mjsv=m202409100101&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3Dacac116526ef67ac%3AT%3D1726465117%3ART%3D1726483290%3AS%3DALNI_MYNvv6tj7URZpI_vRDjSCNYsHQmvg&gpic=UID%3D00000f0b4b3cf35e%3AT%3D1726465117%3ART%3D1726483290%3AS%3DALNI_MZ69j2TVSx2pReMkNwWpM4raLEUUQ&eo_id_str=ID%3D8de6aeb30ee84846%3AT%3D1726465117%3ART%3D1726483290%3AS%3DAA-AfjaLjPSXPSamCiOc-9_O4j90&prev_fmts=0x0%2C1349x641%2C1200x280%2C590x280&nras=3&correlator=5879433764558&frm=20&pv=1&u_tz=360&u_his=1&u_h=768&u_w=1366&u_ah=728&u_aw=1366&u_cd=24&u_sd=1&dmc=8&adx=100&ady=2155&biw=1349&bih=641&scr_x=0&scr_y=0&eid=44759876%2C44759927%2C44759842%2C95338229%2C95341664%2C95341671%2C95342338&oid=2&pvsid=1754528337163103&tmod=1396455046&uas=0&nvt=1&ref=https%3A%2F%2Fwww.channelionline.com%2Fcategory%2Fjanapad%2F&fc=1920&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C1366%2C0%2C0%2C0%2C1366%2C641&vis=1&rsz=%7C%7CEebr%7C&abl=CS&pfx=0&fu=128&bc=31&bz=0&td=1&tdf=2&psd=W251bGwsbnVsbCxudWxsLDNd&nt=1&ifi=3&uci=a!3&btvi=2&fsb=1&dtd=59810
সংস্কৃতি কর্মীদের আরও অভিযোগ, আন্দোলনকারী শিল্পীদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে কালচারাল অফিসার কিছু শিল্পীকে দিয়ে স্মারক লিপি দেওয়ান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। যেখানে ৩৩ জন বিভিন্ন অঙ্গণের শিল্পী সাক্ষর করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিল্পকলায় নিয়োগকৃত প্রশিক্ষক। তাদের চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে তা করা হয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন।
একতা নাট্যগোষ্ঠী অধিকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক বাবু মানুষ কর বলেন, ‘একজন শিল্পী হিসাবে আমি চাই শিল্পকলা শিল্পবান্ধব হোক। আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমি নিজেও। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি এখানে চাকরি করি, আমার কাছে কাগজ পাঠানো হয়েছে স্বাক্ষর করার জন্য, আমি বারবার বলেছি লেখাটা দেখানোর জন্য আমাকে দেখানো হয়নি, শুধু একটা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।’
শিল্পকলা একাডেমির অনেক অনুষ্ঠানের বাজেটে নয়ছয়ের সমস্যা অতীতে ছিল বলেও অভিযোগ করেন এই নৃত্য প্রশিক্ষক।
সিনিয়র সঙ্গীত শিল্পী ও নজরুল সংগীত একাডেমীর সভাপতি আবুল হাসেমের কাছে স্বাক্ষরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। আমাকে বলছে ব্যক্তিগতভাবে তাকে কয়েকজন বিরক্ত করছে। তার পক্ষে একটা স্বাক্ষর দেন। কিন্তু শিল্পকলা সংস্কারে যে আন্দোলন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সেটা আমাকে বলা হয়নি। আমাকে ভুল বুঝিয়ে তারা স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে চাই শিল্পকলা সংস্কার হোক।
চর্যাপদ থিয়েটারের অধিকর্তা সিনিয়র নাট্য অভিনেতা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমাকে তানিয়া ইসলাম ঝুমুর অনেকবার ফোন দিয়েছে লোক পাঠিয়েছে, তার গুণ কীর্তনে স্বাক্ষর করার জন্য আমি করিনি। কিন্তু আমি আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও আন্দোলনে যেতে চাই না, আমার এখন ভয় লাগে, এর আগেও তার বিরুদ্ধে শিল্পীরা কথা বলতে চেয়েছে, তখন বিভিন্নভাবে শিল্পীদের গলা চেপে ধরা হয়েছে, আমার ভয়টা এখন এখানেই। ‘
কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আন্দোলনকারী সংস্কৃতিকর্মী ইফতেখার হোসেন সাকিব বলেন, কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের যোগদানের পর থেকে শিল্পকলায় শিল্পীদের আনাগোনা কমে গিয়েছে। শিল্পকলার বারান্দায় আগে শিল্পীরা রিহার্সাল করতে পারতেন, এখন পারেন না। কারণ বারান্দার জন্য আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়। প্রোগ্রামের জন্য ১৫দিন আগে হল বুকিং দেওয়ার পরও প্রোগ্রামের কয়েক ঘন্টা আগে প্রোগ্রাম বাতিল করে দেন। স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকতেন এই কর্মকর্তা। আমাদের একটা প্রোগ্রাম আয়োজনে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। আর সেই প্রোগ্রাম বাতিল করে দেন তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। সেখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রোগ্রাম করা হতো। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রাম করা হয়েছে। শিল্পকলার একটা ফি জমা দিয়ে প্রোগ্রাম করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামের কোন ফি নেওয়া হতো না। কোন রিসিট দেওয়া হতো না।
আবৃত্তি শিল্পী আন্তা রহমান রোজ বলেন, আমরা কোন সংস্কৃতি বিমুখ-শিল্প বিমুখ ব্যক্তিকে সংস্কৃতি অঙ্গণে চাচ্ছি না। যার কারণে শুধু কিশোরগঞ্জ নয় পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতির জগতে তার অবস্থান চাচ্ছি না। আমাদের অসংখ্য প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন তিনি।
আন্দোলনে যোগ দেয়া আরেক সামাজিক সংগঠন আরডিএসের পরিচালক আদনান আবিদ বলেন, ‘দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে কিন্তু এই কর্মকর্তা এখনো শিল্পকলাকে ফ্যাসিবাদী মনোভাবেই চালাচ্ছে।’ বন্যার্তদের জন্য ফান্ড গঠনে একটি অনুষ্ঠান করার জন্য তার কাছে হলরুম বরাদ্দ চেয়ে পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রাসেল বলেন, ‘শিল্পকলার যে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে সেটার সাধারণ সম্পাদক আমি। সে হিসাবে দায়িত্ব তো থাকেই। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আগের ডিসি স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু নতুন স্যার এসেছেন। উনার নলেজেও আছে। স্যার সবাইকে নিয়ে বসে এটার একটা সমাধান করে দিবেন। আর ফাইল সরানোর কোন সুযোগ নেই। ওগুলো তালাবদ্ধ করে রাখা আছে। ’
এদিকে কালচারাল অফিসারের পক্ষে কিশোরগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রশাসনের সাথে কথা বলছেন বলে একটি মহল প্রচার করছে। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জে সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘তার পক্ষে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না, আমি বিন্দু পরিমাণ এ বিষয়ে কিছুই জানি না, আমার সাথে কালচারাল অফিসার বা তার লোকজনের সাথে কোন কথা হয়নি। দু একজন আমাদের আরেক সমন্বয়ক অভি চৌধুরী সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তিনিও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আমরা এই যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আছি।’
তানিয়া ইসলাম ঝুমুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।